মেঘ নেই, তার পরেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সেটাও আবার মাটির কাছাকাছি নয়, সুনীল আকাশে। আকস্মিক সমস্যা ও দুর্যোগ বিভিন্ন বিমান ও বিমানযাত্রীদের মহাবিপদে ফেলার আশঙ্কা থাকে।

বিমানের পাইলটদের অনেকে জানান, মেঘমুক্ত আকাশেও আকস্মিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়েছে গত কয়েক বছরে।

তার ধাক্কা সহ্য করতে হচ্ছে বিমানকে। পরিষ্কার আকাশে মেঘের নাম ও নিশান নেই। অথচ সেই পরিষ্কার আকাশেই ঘাপটি মেরে থাকে বিপদ!
বিমান পরিবহণ এবং আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় পরিষ্কার আকাশে লুকিয়ে থাকা এই দুর্যোগের নাম ‘ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স (ক্যাট)’। যার কবলে মাঝ-আকাশে প্রবল ঝাঁকুনি খেতে পারে বিমান। পাইলটদের অভিজ্ঞতা বলছে, ইদানীং কলকাতায় নামা-ওঠার সময় বা শহরের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি বিমান এ ধরনের দুর্যোগে পড়ছে।

কলকাতা বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণভাবে প্রধানত তিন ধরনের দুর্যোগের কথা বলেন পাইলটরা। ‘সিভিয়ার’ বা প্রবল, ‘মডারেট’ বা মাঝারি এবং ‘লাইট’ বা হালকা। ইদানীং শান্ত মেঘের মধ্যে মাঝারি বা হালকা ধাক্কার কথা জানাচ্ছেন পাইলটরা।

‘পাঁচ-ছয় বছর ধরে আচমকা ঝঞ্ঝার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স-এর সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। এসব ক্ষেত্রে শান্ত নিরীহ মেঘের ভিতরে ঢুকলে আমরা আচমকাই ঝঞ্ঝার মুখে পড়ে যাচ্ছি। আরো আশঙ্কার কথা, প্রথম দিকে যেটা হালকা ঝঞ্ঝা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মাঝারি মাত্রার ঝঞ্ঝায় এসে ঠেকেছে। আর মাঝারিগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে প্রবল ঝঞ্ঝায় এবং এটা আকাশে যেকোনো উচ্চতাতেই ঘটছে”, বলেন পাইলট ক্যাপ্টেন জয়দীপ ব্যানার্জি।

ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্ব উষ্ণায়ন এই ধরনের দুর্যোগের অন্যতম সম্ভাব্য কারণ হতেই পারে।

তাঁর ব্যাখ্যা, বায়ুমণ্ডলের দু’টি স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার ফারাক যদি বেশি হয়, তাহলে ‘ক্যাট’ তৈরি হতে পারে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে তাপমাত্রার ফারাক বেশি হতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে। সেজন্য এই দুর্যোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাপমাত্রার ফারাক বেশি হয় ঋতু পরিবর্তনের সময়। তাই ওই সব সময়ে এই ধরনের আচমকা দুর্যোগও বেশি হয়।

আবহাওয়া দপ্তরের খবর, অনেক সময় আগেভাগে তাপমাত্রার ফারাক ধরতে পারলে পাইলটদের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পাইলটদের অভিজ্ঞতা, মাটিতে রাখা আবহাওয়া পরিমাপক যন্ত্র কিংবা বিমানের ভিতরের রেডারেও এই চোরাগোপ্তা ঝঞ্ঝা ধরা পড়ছে না।

তাই আকাশে সামনে মেঘ দেখলেই কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে পাইলটরা সিট বেল্ট সাইন ‘অন’ করে দিচ্ছেন। কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কাছে ঘুরপথে যাওয়ার অনুমতি চাইছেন।

বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, চাইলেই সব সময় সেই অনুমতি দেওয়া যায় না। সেই সময় দু’পাশে, উপর-নীচে কোথায় বিমান আছে, তা দেখেই পাইলটকে ঘুরপথে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে আকাশে লুকোনো ‘বিপদ’‌কে নিয়ে যাত্রীদের আশ্বস্ত করছেন বিমান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি যাত্রিবাহী বিমান এখন প্রবল ঝঞ্ঝার মোকাবিলা করতে সক্ষম।

সূত্র: আনন্দবাজার।